1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বাঙালির জীবনে উৎসব ছাড়া আর কী আছে'

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১২ এপ্রিল ২০২৪

এবার ঈদ আর বাংলা নবর্ষের উৎসব প্রায় একাকার হয়ে গেছে। এমন এক সময়ে বাঙালির উৎসব নিয়ে কথা বলেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সংগীত শিল্পী খুরশীদ আলম।

https://p.dw.com/p/4egox
পহেলা বৈশাখ
খুরশীদ আলম বলেন, বাঙালি জাতি পহেলা বৈশাখকে অনেক গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশে যতগুলো উৎসব-পার্বন আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পহেলা বৈশাখকে প্রাধান্য দেনছবি: DW/M. Mamun

ডয়চে ভেলে: এবার ঈদ এবং পহেলা বৈশাখ প্রায় একই সময়ে। বাঙালি জীবনে এই উৎসবের গুরুত্ব কতটা?

খুরশীদ আলম: বাঙালি জাতি পহেলা বৈশাখকে অনেক গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশে যতগুলো উৎসব-পার্বন আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পহেলা বৈশাখকে প্রাধান্য দেন। ১৯৪৭ সালের পর থেকেই এটা ছিল। পাকিস্তান আমলে একটু প্রেসার ছিল, সে কারণে হয়ত ভালোভাবে করতে পারেনি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পরে এটা আরো ভালোভাবে উদযাপন হচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরম্ভ করে নানা স্থানে, সাংস্কৃতিক সংগঠন সবাই এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে। এটা আমাদের ঐতিহ্য।

এটা আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে, সংস্কৃতির বিকাশে কতটা ভূমিকা রাখছে? পাকিস্তান আসলে রমনা বটমূলের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান তো প্রতিবাদের ভাষা ছিল।

-আগে  যেটা ছিল পহেলা বৈশাখ রমনা বটমূলে  হতো, শহীদ মিনারে হতো। বোমা হামলাসহ নানা কারণে একটু ছোট হয়েছে। কিন্তু লোকের যে চাওয়া, প্রত্যেকেই চায় পহেলা বৈশাখকে ভালোভাবে উদযাপন করতে। বোমা হামলার পর সবাই একটু সতর্ক থাকে। সরকারিভাবেই হোক আর যারা অনুষ্ঠান আয়োজন করে সবাই। তারপরেও আমরা আমোদ-ফুর্তি করতে খুব ভালোবাসি। এটা ছায়ানট শুরু করেছিল। তারপর সুরের ধারা শুরু করলো। এরপর আস্তে আস্তে সবাই করছে।

বাঙালি জাতি আমরা খুব ইমোশনাল: খুরশীদ

এটাকে তো আমরা সার্বজনীন উৎসব বলি। এটা সার্বজনীন হওয়ার কারণ কী?

আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই উৎসব পালন করে আসছি। শুরুতে মঙ্গল শোভাযাত্রা, মঙ্গলদীপ সেটা আগে কম ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এটা শুরু হয়। তারপরেও ধরেন, বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন মতামত থাকতে পারে। কেউ পছন্দ করে, কেউ পছন্দ করে না। সবাই যে পহেলা বৈশাখ উৎসব পালনকে বরণ করে নেয়, এটা আমি বিশ্বাস করি না। অনেকে আছে এটাকে পছন্দ করে না। এটা যেকোনো ধর্মেরই হতে পারে।

এটা তো একটা অসাম্প্রদায়িক উৎসব..

অবশ্যই। সবারই করা উচিত। সবাই করে।  কিন্তু তারপরও কিছু লোক থাকে না। কিছু ভালো-মন্দ তো সবখানেই থাকে।

ঈদের গুরুত্ব বাঙালির জীবনে কতটা?

আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি ঈদ হলো সবাইকে নিয়ে আনন্দ করা। ধনী-গরিবের ভেদাভেদ থাকা উচিত না বলে আমি বিশ্বাস করি। আগে যারা পাড়া-মহল্লার সরদার ছিলেন, তারা ঈদের দিন দুস্থ ও গরিবদের সেমাই জামাকাপড় দিতেন। এখনও দেয় শো-আপ করার জন্য । আগে এতটা প্রচারের বিষয় ছিল না। কেউ ৫০০ দিয়ে পাঁচ হাজার বলেন। মন্ত্রী মহোদয় ক্যামেরার সামনে ছাড়া দেবেন না। সবাই চায় আমি ফেসবুকে দেবো। টেলিভিশনে যাবে। তখন অবশ্য টেলিভিশন ছিল না। আর তখন যারা দান খয়রাত করতেন গোপনেই করতেন।

কখনো কখনো এই উৎসবে বৈষম্য কি প্রকট হয়ে ওঠে?

অবশ্যই। এখন কাউকে ৫০০০ টাকা দিলেই সেটা প্রচার করা হয় টেলিভিশনে, ফেসবুকে। আগে এটা ছিল না। আগে একটা মানবিক দিক ছিল। তারা বলতো না- আমি এত লোককে খাওয়ালাম, এত লোককে পাঞ্জাবি দিলাম।

আগে তো পত্রিকার ঈদ সংখ্যা, পহেলা বৈশাখের প্রকাশনা হতো। এখন তো সব ডিজিটাল হয়ে গেছে..

ইত্তেফাক বের হতো। বেগম বের হতো। চিত্রালী বের হতো। চিত্রাকাশ বের হতো। সিনেমা বের হতো। এখন সেগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কোনোরকমে ইত্তেফাক টিকে আছে। এখন সবাই তো মোবাইলের দিকে আকৃষ্ট হয়ে গেছে।

সাহিত্য চর্চার একটা সময় ছিল ঈদ ,পহেলা বৈশাখ কেন্দ্র করে। সেটা কি কমে গেছে?

অত বিস্তারিত আমি বলতে পারবো না। তবে ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলা অ্যাকাডেমির বই মেলায় আগে যারা লিখতেন, তাদের লেখার যে মান তার সঙ্গে তুলনা করে আমি কাউকে ছোট করছি না,  তবে তখন যারা সাহিত্য চর্চা করতেন, তারাই প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। হতে পারে একজন চিকিৎসক তিনি কবিতা, গল্প লিখতে পারেন। এখন আমি গান গাই, আবার কবিতা উপন্যাসও লিখছি। এরকম হচ্ছে আজকাল।

ঈদে তো নতুন গান বের হতো..

বললাম তো মোবাইল একদিকে আমাদের অনেক উপকার করেছে। আবার আরেকটা হয়েছে যে আগে যেমন ক্যাসেট, সিডি কেনার চল ছিল, সেটা এখন আর নাই।

পূজাও তো একটি বড় উৎসব...

যেরকম ঈদের মধ্যে হিন্দুরাও অংশগ্রহণ করতেন, তেমনি পূজার মধ্যে মুসলমানরাও অংশগ্রহণ করতেন। আগে রমনা রেসকোর্সের মন্দিরেই সবচেয়ে বড় পূজা হতো । তারপরে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে, রামকৃষ্ণ মিশনে হতো। এখন উত্তরায় আলাদা একটা পূজা হয়, গুলশানে আলাদা হয়েছে। আমরা আলাদা আলাদা হয়ে গেছি।

আমরা সব মিলিয়ে কি একটু বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি? বা একটু একটু সাম্প্রদায়িকতা ঢুকছে আবার?

সাম্প্রদায়িকতা নয়।  আমি বড়, আমি একটা করে দেখাচ্ছি। তোমরা গরিব, তোমরা কিছু করতে পারবেনা।

আপনার শৈশবের ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ নিয়ে যদি বলতেন..

আমাদের সময় কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে শিক্ষিত, কে শিক্ষিত না- এই ভেদাভেদটা কম ছিল। ওই যে আনন্দ ওইটাই ছিল আসল। এখনো আছে, অবশ্যই আছে। এখন কর্পোরেটরা গান প্রকাশ করছে, পূজা করছে , পহেলা বৈশাখ করছে। তখন কিন্তু শিক্ষিত সমাজ, পাঠশালা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেকে অংশগ্রণ করতো। আমি বিশ্বাস করি যে, বাঙালি জাতি আমরা খুব ইমোশনাল। এটা তারা কাটিয়ে উঠবে।

তাহলে বাঙালির উৎসবে কি কর্পোরেট কালচার ঢুকে যাচ্ছে?

কর্পোরেট আসছে। তাদের প্রাধান্যটাই এখন বেশি। আগে দেখা গেছে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এক জায়গায় গেছেন, আরেক জায়গায় হয়তো ঢাকা কলেজের তখনকার প্রিন্সিপাল জালাল স্যার গেছেন। এখন হলো আমি যাবো, আমার পয়সা আছে। আমাকে যেতে হবে।

বাঙালি এত উৎসব প্রিয় কেন?

আর তো কিছু নাই বাঙালির জীবনে এই উৎসব ছাড়া। আর কিছু আছে? বলেন! এই উৎসবটাই বাঙালির আছে। সত্যি কথা বলতে কি, এইখানে একটা গ্রুপ আছে, যারা নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে। টেলিভিশনে প্রচারের জন্য না, কিংবা তার নাম প্রচার হবে সেজন্য না। অন্তর থেকে তারা ভালোবাসে বলেই কাজ করে। সেটা ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির জন্য বলতে পারেন, স্বাধীনতা দিবসের জন্য বলতে পারেন, বিজয় দিবসের জন্য বলতে পারেন। নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রচারবিমুখ লোক আছে। ভালোমন্দ অবশ্যই আছে।

আমাদের জীবনে উৎসব কেন প্রয়োজন?

তা না হলে আপনি তো রোবটের মতো হয়ে যাবেন।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান