1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুর্নীতি ধরতে সব শিক্ষককে দিতে হবে যোগ্যতার নথি

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৮ মে ২০২৪

দীর্ঘদিন স্কুলে শিক্ষকতা করা শিক্ষকদের নতুন করে জমা দিতে হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতার নথি। নিয়োগ দুর্নীতিতে কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নথি চেয়েছে শিক্ষা দপ্তর।

https://p.dw.com/p/4g1qt
কলকাতা হাইকোর্ট
দীর্ঘদিন স্কুলে শিক্ষকতা করা শিক্ষকদের নতুন করে জমা দিতে হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতার নথি। নিয়োগ দুর্নীতিতে কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নথি চেয়েছে শিক্ষা দপ্তর।ছবি: Sudipta Bhowmick/PantherMedia

পশ্চিমবঙ্গের ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরির ভবিষ্যৎএখন ভারতের শীর্ষ আদালতের হাতে। আগামী জুলাইয়ে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার পরের শুনানি। তার আগে দুর্নীতির অন্য একটি মামলায় সন্দেহের আবর্তে বড় সংখ্যক শিক্ষক।

নথি জমার নির্দেশ

গত এপ্রিল মাসে ভুয়ো নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলার বিচার চলছিল কলকাতা হাইকোর্টে। বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু নির্দেশ দেন, ২০১৬ সালের আগে হওয়া সব নিয়োগের ক্ষেত্রে চাকরির প্রাপকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।

এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের এক লক্ষ ৩০ হাজার শিক্ষককেতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার নথি জমা দিতে হবে সরকারের কাছে। এই মর্মে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা দপ্তর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ২৭ মে তারিখের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নথি জমা করতে হবে।

প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকদের নথি পৌঁছতে হবে স্কুল পরিদর্শকদের কাছে। এই নথির ভিত্তিতে পরিদর্শকরা রিপোর্ট তৈরি করবেন। নথি পেশ করার জন্য ইতিমধ্যে বিশেষ পোর্টাল খোলা হয়েছে। সেখানে নথি জমা দেওয়া যাবে। একই সঙ্গে দিতে হবে হার্ড কপি।

শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা নয়, স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগপত্র ও বর্তমান চাকরির প্রমাণ সম্বলিত নথি জমা দিতে হবে।এসএসসি তৈরি হওয়ার আগেযে শিক্ষকরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে অনুমোদনের শংসাপত্র পেশ করতে হবে। এসএসসি গঠনের আগে স্কুলের পরিচালন সমিতির মাধ্যমে শিক্ষকদের নিয়োগ করা হত।

যে মামলার সূত্রে

চাকরিপ্রার্থী সোমা রায়ের করা ভুয়ো শিক্ষক মামলায় এই সংক্রান্ত নির্দেশ দেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। শুধু শিক্ষক নয়, একই সঙ্গে ২০১১ সাল থেকে সব জেলা পরিদর্শকের কাজও খতিয়ে দেখতে বলেছেন বিচারপতি।

শিক্ষকদের নথি সিআইডির তদন্তের কাজে লাগবে। বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, কমিশনের সুপারিশ এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নিয়োগপত্র নিয়েই চাকরি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে রাজ্যের গোয়েন্দাদের।

এই মামলায় মুর্শিদাবাদের গোঠা হাইস্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আশিস তিওয়ারির ছেলে অনিমেষের ভুয়ো নিয়োগের বিষয়টি উঠে এসেছিল। সেই ঘটনায় বাবা, ছেলে-সহ কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করেছিল সিআইডি। পরে বাঁকুড়া এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ভুয়ো শিক্ষকের খোঁজ মেলে তদন্তের সূত্রে।

সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল করে দেয়।নবম, দশম, একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষক ও গ্রুপ ডি কর্মীদের নিয়োগ বাতিল হয়ে যায়। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াই চলছে। আপাতত চাকরি রক্ষা পেয়েছে শীর্ষ আদালতের নির্দেশে। পরবর্তী শুনানিতে বোঝা যাবে জল কোন দিকে গড়ায়।

তবে সোমা রায়ের করা মামলা দেখিয়ে দিয়েছে, অতীতের নিয়োগকেও সন্দেহের চোখে দেখছে আদালত। তাই দীর্ঘদিন চাকরি করা শিক্ষকদের নতুন করে যোগ্যতার প্রমাণ পেশ করতে হচ্ছে।

'বারবার নথি জমা দিতে গিয়ে শিক্ষা থেকে ফোকাস সরে যাচ্ছে'

শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া

শিক্ষা দপ্তরের নয়া উদ্যোগে শিক্ষকদের বড় অংশই ক্ষুণ্ণ। বিশেষত কাজের চাপে থাকা প্রধান শিক্ষকেরা সমস্যায় পড়ছেন। সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জের কনকনগর এসডি ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরী বলেন, "কিছুদিন আগেই এক দফা কাগজপত্র জমা দেয়া হয়েছে। তারপর আবার নতুন করে নথি জমা করতে হবে। এর ফলে আমাদের ফোকাস সরে যাচ্ছে। যারা স্কুল বা শিক্ষা নিয়ে ভাবছেন, তাদের ব্যতিব্যস্ত করার চেষ্টা নয় কি এসব?"

এর ফলে শিক্ষকদের একাংশ বেশ বিব্রত বোধ করছেন। তারা কেউ তিন দশক স্কুলে চাকরি করছেন। কেউ বা অবসরের মুখে। এত পুরনো কাগজপত্র সকলের হাতে নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে কি এদের বেতন বা অবসরকালীন সুবিধা নিয়ে সংশয় তৈরি হবে?

অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স এন্ড হেডমিস্ট্রেস সংগঠনের সভাপতি ডঃ হরিদাস ঘটক ডিডাব্লিউকে বলেন, "কোনো কোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে সন্দেহ থাকতে পারে। যেসব ক্ষেত্রে প্রশ্ন আছে, তাদের নথিপত্র খতিয়ে দেখা যেত। কিন্তু সব শিক্ষকের কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখার বিষয়টা আমি সমর্থন করতে পারছি না।"

এই উদ্যোগের ফলে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে মনে করেন শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "শিক্ষাক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্নীতি সামনে এসেছে। কিন্তু সেটাকে গুলিয়ে দিতে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকেই প্রশ্নচিহ্নের মুখে বা কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে। এটা আসলে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা। এর মূল উদ্দেশ্য সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করে বেসরকারিকরণের দিকে ঠেলে দেয়া।"

দক্ষিণ কলকাতায় বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠান ঢাকুরিয়া বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষিকার পদে থাকা দীপান্বিতা রায়চৌধুরী এ খবর শুনে বিস্মিত। ডিডাব্লিউকে বলেন, "দুর্নীতির চাপে সততার সঙ্গে নিযোগ পাওয়া শিক্ষকরাও বিব্রত হচ্ছেন। সকলের পক্ষে সময়মতো কাগজ দেয়া সম্ভব নাও হতে পারে। সৎ ও অসৎ উভয়কেই একই দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। এতে শুধু শিক্ষক নয়, শিক্ষা ব্যবস্থারও সংকট তৈরি হবে।"