1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সহিংসতাকে ‘ঝগড়াঝাঁটি' বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সমীর কুমার দে ঢাকা
১১ নভেম্বর ২০২১

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুই ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে৷ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না৷ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নির্বাচনী সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/42sSr
Bangladesch Wahlen in der Stadt Dhaka
ফাইল ফটোছবি: DW/Sazzad Hossain

এসব সহিংসতার প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘ইউপি নির্বাচনে সবসময় একটু ঝগড়াঝাঁটি হয়েই থাকে৷’’

বৃহস্পতিবার ৮৩৫টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনী সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছে সাত জনের৷ এর মধ্যে নরসিংদীতে তিনজন, কুমিল্লায় দুইজন, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে একজন করে মারা গেছেন৷ এর আগে ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম দফার ভোটে মারা যান ছয়জন৷ এরপর থেকে ভোটের মাঠের প্রচারণায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে আরও ২৪ জনের৷ সবমিলিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে৷

এই মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকেরা জানতে চেয়েছিলেন অপ্রীতিকর ঘটনা ও সহিংসতা বন্ধে আপনি পুলিশকে কী নির্দেশনা দিয়েছিলেন? জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনারা এমন একটা উদাহরণ দিতে পারবেন যে পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল? পুলিশের কাজ পুলিশ করছে৷ আমাদের বিশাল এলাকা নিয়ে নির্বাচন হচ্ছে৷ এই ইউপি নির্বাচন এটা সবসময় আপনারা দেখে আসছেন, এটা গোষ্ঠী-গোষ্ঠীর নির্বাচন, আধিপত্যের নির্বাচন, এখানে সবসময়ই একটু ঝগড়াঝাঁটি হয়েই থাকে৷ যেটা হয়েছে বেশ কয়েকটি জায়গায় হতাহতের ঘটনা আমরা দেখছি৷ পুলিশ যথার্থভাবে চিহ্নিত করেছে, দোষীদের ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করে ফেলেছে৷ যারা এই চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে৷”

ড. তোফায়েল আহমেদ

‘ঝগড়াঝাঁটি’ বিষয় জানতে চাইলে স্থনীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে তারা এই নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন না৷ ৩৭ জনের মৃত্যুর পর এটা কিভাবে ঝগড়াঝাঁটি হয়৷ তার বক্তব্য দেখে মনে হচ্ছে, মারামারি করে যে জিতে আসত পারবা সে আমার৷ আগামী নির্বাচনে তোমাকে আমার কাজে লাগবে৷’’ কেন এই সহিংসতা জানতে চাইলে ড. আহমেদ বলেন, ‘‘এটা তো নির্বাচনী সহিংসতা না, এটা ক্ষমতা দখলের সহিংসতা৷ এখানে যে নির্বাচিত হতে পারবে, সে তত বেশি লুটপাট করতে পারবে৷ এখন নির্বাচন করছে কারা? এদের লুটপাটের না হয় জবরদখলের ব্যাকগ্রাউন্ড আছে৷ নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্যই তো তাদের নির্বাচিত হওয়া দরকার৷” 

বৃহস্পতিবারের নির্বাচনের 'ঝগড়াঝাঁটি'তে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার বাহুরখলা ইউনিয়নের হিরারচর গ্রামের মৃত মুদাফর আলীর ছেলে সানাউল্লাহ ডালি (৬০) ও মানিকচর ইউনিয়নের বল্লবেরকান্দি গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে শাওন আহমেদ (২৫) মারা গেছেন৷ মানিকরচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাহুরখলা ইউনিয়নের খিলারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সংঘর্ষে তাদের মৃত্যু হয়৷

শারমিন মুরশিদ

নরসিংদীর রায়পুরায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে তিন জন মারা গেছেন৷ নিহতরা হলেন, বাঁশগাড়ি এলাকার দুলাল মিয়া (৪৫), সালাউদ্দিন (৪১) ও জাহাঙ্গীর মিয়া (২৬)৷ বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছে আশরাফুল হক সরকার৷ দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন নির্বাচন করছেন মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে৷ নির্বাচন ঘিরে এই দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে এই তিনজনের মৃত্যু হয়৷

এছাড়া কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকূল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন৷ সাধারণ সদস্য প্রার্থী আনোয়ারা বেগম ও আবু বক্কর সিদ্দীকের কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে আক্তারুজ্জামান পুতু (৩২) মারা যান৷ দুই প্রার্থীই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে৷ চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতেও দুই ইউপি মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মোহাম্মদ শফি (৫৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন৷ দুই সদস্য প্রার্থীই আওয়ামী লীগ সমর্থক বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন৷

অভ্যন্তরীণ বিবাদে কেন এই প্রাণক্ষয়? জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখানে নির্বাচিত হতে পারলে তো নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা, লুটপাটের ভাগিদার হওয়া যাবে৷ ফলে তারা সর্বশক্তি নিয়ে নির্বাচনের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছে৷ এখানে আধিপত্যের লড়াইয়ে যে টিকে থাকতে পারবে সেই সুবিধাগুলো পাবে৷ ফলে এটাকে ভোটের সহিংসতা না বলে আধিপত্যের লড়াইয়ের সহিংসতা বলাই ভালো৷ আর নির্বাচন কমিশন তো নিজেদের অবস্থান আগেই নষ্ট করে ফেলেছে৷ এই ধরনের সহিংসতা বন্ধে তাদের কোন ধরনের পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না৷ তাদের কেউ মাঠেও নেই৷”

তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতী'র নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনে এলে তখনও হয়তো এই ধরনের সহিংসতা হতে পারত৷ কিন্তু এত সহিংসতা আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে দেখিনি৷ কিন্তু এখানে যে বিষয়টা লক্ষ্যণীয় যে, যারা ভোটের মাঠে সহিংসতা করছে তারা আগে মাঠ থেকে বিরোধীদের হটিয়ে দিয়েছে৷ ফাঁকা মাঠে তারা এখন নিজেরাই ভীষণ অসহিষ্ণু ও উগ্র হয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে৷ এই পরিস্থিতি এখন কোথায় গিয়ে ঠেকবে, সেটাই এখন আমার প্রশ্ন?’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য