1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা: পরিবেশ কতটা অবাধ?

তায়েব মিল্লাত হোসেন ঢাকা
৩ মে ২০২৪

কখনো আইনের হাতকড়া, কখনো লোকনিন্দার ভয়- এসব উপেক্ষা করেই সৃজনশীলতায় মগ্ন থাকেন শিল্পীরা। কিন্তু অনলাইনভিত্তিক সমাজমাধ্যমের উন্মুক্ত যুগে প্রগতিবাদী নন্দন-চর্চার পরিবেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?

https://p.dw.com/p/4fTmf
ঢাকায় লালন সঙ্গীতের আসর
রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশে প্রায়ই আক্রান্ত হচ্ছে শিল্প-সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠান, আক্রান্ত হচ্ছেন সৃজনশীল মানুষরাছবি: Trishna Sarker

সেটা আট বছর আগের ঘটনা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তুচ্ছ বিষয় কেন্দ্র করে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও পুলিশ প্রশাসন মুখোমুখি অবস্থান নেয়। পুলিশের পাশে ছিল সরকার অনুসারী রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও। এই ঘটনার জেরে সহপাঠীর মৃত্যুতে বিক্ষুব্ধ মাদ্রাসার ছাত্র ও বহিরাগতদের আক্রমণে ধ্বংস হয় সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ জাদুঘর। তাদের হাতে তখন আরো আক্রান্ত হয় শহরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও গ্রন্থাগার।

রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশে প্রায়ই আক্রান্ত হচ্ছে শিল্প-সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠান। আক্রান্ত হচ্ছেন সৃজনশীল মানুষরা। ফলে প্রগতি-চর্চার ক্ষেত্রে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। কবি থেকে বাউল, কেউ এর থেকে মুক্ত নন।

গত বছর নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় লালন সঙ্গীতের আখড়াবাড়ি পুলকিত আশ্রমে সন্ত্রাসীরা হামলা করে। সেই হামলার ঘটনায় তিন জন বাউল আহত হন। তানপুরা, দোতারাসহ সব বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলা হয়।

বাউল গানের বিরুদ্ধে সবশেষ আঘাত দেখা গেছে, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে। সেখানে সঞ্জয় রক্ষিত নামে একজন যুবক লালনের গানের দুটো পঙক্তি তার ফেসবুক স্টোরিতে শেয়ার করেন। লালনের ভাষ্যে যা, ‘সুন্নত দিলে হয় মুসলমান/ নারীলোকের কী হয় বিধান।' এমন বাণী সমাজমাধ্যমে প্রচারের দায়ে সঞ্জয়কে ৫৪ ধারায় আটক করে স্থানীয় থানা।পরে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান তিনি

জীবনচর্চায় লালন দর্শন থাকলে সংকট থাকতো না: সাইমন জাকারিয়া

লালনের গানের বাণী ধরে এমন একটি ঘটনায় নাখোশ লালন গবেষক ও লেখক ড. সাইমন জাকারিয়া। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘লালন গানের মাধ্যমে তার সময়ের ধর্ম ও লিঙ্গ দ্বারা বিভক্ত সমাজ চিহ্নিত করেছিলেন। শতাধিক বছর আগে তিনি মানুষকে মানুষের পরিচয়ে চেয়েছিলেন, সমাজে সম্প্রীতি চেয়েছিলেন।'' শিক্ষার অনেক অগ্রগতি হলেও তা আজো অর্জিত হয়নি বলে মনে করেন ভাবনগর ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. সাইমন জাকারিয়া।

তিনি আরো যোগ করেন, ‘‘লোকশিক্ষার বাহন ভাবসাধনা, তাতে দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে না। বাউলদের উপর আঘাত, আটক- এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। লালনের চর্চা যদি পাঠ্যক্রমে যুক্ত করা হয়, জীবনচর্চায় যদি লালন দর্শন থাকে, তবে সংকটগুলো থাকতো না। লালনপন্থিদের আঘাত করার সঙ্গে ভাবসাধনার বিষয় শুধু নয়, অনেক সময় এর সঙ্গে বৈষয়িক বিষয়, স্বার্থসিদ্ধির ব্যাপারও থাকে- বলছেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সাইমন জাকারিয়া।

তার মতে, ‘‘লালনের দর্শন প্রতিষ্ঠিত হলে স্বার্থসিদ্ধির যে রাজনীতি ও স্বার্থসিদ্ধির যে ধর্মচর্চা, তাতে অসুবিধা হয়। এই কারণেও বাউলরা বারবার আক্রান্ত হন।''

আয়োজনে নিয়ন্ত্রণ, সৃজনে হস্তক্ষেপ

প্রশাসনের হস্তক্ষেপে প্রায়ই সংকুচিত হয়ে পড়ছে সাংস্কৃতিক আয়োজন। এবার রোজার মাসের কথা বলে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালন সাঁইয়ের আখড়াবাড়িতে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে লালন স্মরণোৎসব হয়েছে তিন দিনের জায়গায় এক দিন, যা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন লালন ভক্ত ও অনুসারীরা।

গত কয়েক বছর ধরে কখনো নিরাপত্তা, কখনো রোজার মাসের কথা বলে বাংলা নববর্ষ উদযাপনও নিয়ন্ত্রণ করছে প্রশাসন। এবারও পুলিশ প্রহরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়েছে সীমিত পরিসরে। খোলা জায়গার সার্বিক উৎসব সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাঙালি সংস্কৃতিচর্চায় নিয়মের এই বেড়াজাল মানতে পারেনি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। তাই তারা প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাত নয়টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান করেছিল। যা নিয়ে পরে আবার বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতি প্রকাশিত হয়।

সব ক্ষেত্রেই অপরের অধিকারকে মান্য করতে হবে: মফিদুল হক

সাংস্কৃতিক আয়োজন নিয়ে প্রশাসনের অবস্থান বিষয়ে জানতে চাইলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা মফিদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০০১ সালে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে বোমা হামলা হয়েছিল। তারপর উদীচীর অনুষ্ঠানে, বাউলদের উপর হামলা করেছে জঙ্গিরা। ধর্মের নামে এই গোষ্ঠী নববর্ষের অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে থাকে। এসব কারণে নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে সন্ধ্যার আগে অনুষ্ঠান শেষ করার কথা একটা সময় বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তাই বিশেষ সময়ের নিয়ম সবসময়ের জন্য প্রযোজ্য করে তোলা ঠিক নয় বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে মত প্রকাশের সুযোগ অনেক বেড়েছে। কিন্তু এর অপব্যবহারের দিকও রয়েছে বলে মনে করেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক মফিদুল হক। তিনি বলছেন, সৃষ্টিশীল কোনো কাজ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা সোশাল মিডিয়ায় হতে পারে। কিন্তু অনেক সময় তা আক্রমণাত্মক ও হিংসাত্মক হয়ে যায়। ঘৃণা সঞ্চার করা, অপরকে আঘাত- এমন বিষয় দেখা যায়। সোশাল মিডিয়াকে এভাবে যথেচ্ছাচারের জায়গা হতে দেওয়া ঠিক নয় বলে মনে করেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটূক্তির কারণেই সম্প্রতি ট্রান্সজেন্ডারের গল্প নিয়ে তৈরি একটি নাটক অনলাইন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে মফিদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের সংবিধানে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, ট্রান্সজেন্ডারও সেটা পাবেন। তাই ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে নাটক তুলে নেওয়া সঙ্গত নয়। সব ক্ষেত্রেই অপরের অধিকারকে মান্য করতে হবে‘‘- বলছেন তিনি।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান