1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লোডশেডিং: এক ঘণ্টা ও ‘এক ঘণ্টা করে’র শুভঙ্করের ফাঁকি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৬ জুলাই ২০২২

সরকার সারাদেশে প্রতি এলাকায় দিনে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং-এর কথা বললেও বাস্তবে কোথাও কোথাও দিনে ৯ ঘণ্টাও হচ্ছে৷ লোডশেডিংয়ের নতুন যে শিডিউল দেয়া হয়েছে তাতে কোথাও দিনে তিন ঘণ্টার কম লোডশেডিং নেই৷

https://p.dw.com/p/4EfsG
সরকার সারাদেশে প্রতি এলাকায় দিনে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং-এর কথা বললেও বাস্তবে কোথাও কোথাও দিনে ৯ ঘণ্টাও হচ্ছে
সরকার সারাদেশে প্রতি এলাকায় দিনে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং-এর কথা বললেও বাস্তবে কোথাও কোথাও দিনে ৯ ঘণ্টাও হচ্ছেছবি: Mortuza Rashed/DW

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ডয়চে ভেলের কাছে দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিং-এর নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছে৷ তারা বলছে, পুরো দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিং নয়৷ যখন লোডশেডিং করা হবে, তখন টানা সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা করা হবে৷ এটা দিনে একাধিকবারও হতে পারে৷

১৯ জুলাই থেকে বিদ্যুতের এই রেশনিং শুরু হয়৷ তখন বলা হয়েছিল প্রথম সাত দিন ২৪ ঘণ্টায় এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হবে৷ পরে  পরিস্থিতি বুঝে দুই ঘণ্টা করা হতে পারে৷ ২৫ জুলাই এক সপ্তাহ শেষে দুই ঘণ্টা বা তার বেশি লোডশেডিংয়ের কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়নি৷ কিন্তু বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো ২৬ জুলাইয়ের যে লোড শেডিং শিডিউল প্রকাশ করেছে, তাতে সর্বনিম্ন তিন ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টার লোডশেডিং করা হচ্ছে৷ সিলেট অঞ্চলে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ৷ সিলেটের কোথাও চার ঘণ্টার কম লোডশেডিং নেই৷ সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা সেখানেই৷

ঢাকায় ডেসকো যে শিডিউল দিয়েছে, তাতে সর্বনিম্ন লোডশেডিং তিন ঘণ্টা আর সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা৷ তবে ঢাকার আরেকটি বিতরণ কর্তৃপক্ষ ডিপিডিসি অবশ্য এক ঘণ্টা করেই লোডশেডিংয়ের শিডিউল দিয়েছে৷ তবে তাদের ওয়েবসাইটে লিখে রেখেছে " এই মুহূর্তে কোনো লোডশেডিং নেই৷''

"ওয়েস্ট জোন পাওয়ার কোম্পানি” লোডশেডিংয়ের নতুন শিডিউল প্রকাশ করছে না৷ তবে পুরোনো শিডিউলে যশোর ও খুলনা এলাকায় দুইঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা বলা হয়েছে৷ রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলে নেসকো এক ঘণ্টা করেই লোড শেডিংয়ের কথা বলছে৷

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে অসহায় পাকিস্তানের মানুষ

পিডিবি সরাসরি যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ করে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও সিলেটের কিছু অঞ্চলে৷ ওইসব এলাকায় সর্বনিম্ন দুই ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ছয় ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের তালিকা দেয়া হয়েছে৷  সিলেট ওসমানি বিমান বন্দরেই ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে৷ তবে এর আগে তারা ২৫ থেকে ২৭ জুলাইয়ের যে শিডিউল প্রকাশ করে, তাতে সিলেটের মিয়াপাড়া, মেন্দিবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা বলা হয়৷ সর্বনিম্ন ৮ ঘণ্টা৷

বাংলাদেশে বিদ্যুতের সবচেয়ে বেশি গ্রাহক বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের৷ তারা উপজেলা পর্যায়ে এবং গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে৷ তারা সর্বনিম্ন তিন ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ছয় ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের তালিকা দিয়েছে৷ কিন্তু বাস্তবে সেটা মানা হচ্ছে না৷
সিলেটের বাসিন্দা মনোয়ার জাহান জানান, বিদ্যুতের যে শিডিউল দেয়া হচ্ছে, তা-ও মানা হচ্ছে না৷ এখন এক ঘণ্টা পর এক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ থাকে না৷ বলতে গেলে দিনে ৯-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না৷ আর গ্রামাঞ্চলে পল্লী বিদ্যুতের অবস্থা আগে থেকেই খারাপ ছিল৷ এখন আরো খারাপ৷ কোথাও কোথাও ১২-১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না৷

‘‘আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে শিডিউল মানা যায় না’’

সিলেট বিভাগের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কাদির বলেন, ‘‘আজকে (মঙ্গলবার) সিলেট বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ৫৫০ মেগাওয়াট৷ পাওয়া গেছে চাহিদার অর্ধেকের একটু বেশি ২৭০ মেগাওয়াট৷ আজকে আবহাওয়া একটু ভালো থাকায় আমরা শিডিউল অনেকটা মানতে পারছি৷ তবে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে শিডিউল কখনো কখনো মানা যায় না৷

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয়৷তার বেশি লোডশেডিং হয় না৷''

রংপুরের বাসিন্দা লিয়াকত আলী বাদল বলেন, ‘‘এখানে শিডিউল মানা হচ্ছে না৷ এক ঘণ্টা পরপরই বিদ্যুৎ যায়৷ রাত ১১ টা থেকে সকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে৷ দিনের বেলা আসলে বিদ্যুতের ঠিক থাকে না৷ গ্রামের অবস্থা আরো খারাপ৷''

রংপুর বিভাগের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘‘দিনে বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা আছে ৭০০ মেগাওয়াট৷ পাচ্ছি ৫৫০ মেগাওয়াট৷ ফলে শিডিউল মানা কঠিন৷''

তিনি বলেন, ‘‘দিনে এত ঘণ্টা করে লোডশেডিং করলে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকে৷  কিন্তু আমার তো ঘাটতি ১৫০ মেগাওয়াট৷ তাই বেশি লোডশেডিং করা হচ্ছে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুরো দিনে এক ঘণ্টা নয়, এক ঘন্টা করে লোডশেডিং করতে হবে৷ তাই দিনে যতবারই করি এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করি৷''

‘‘কাঁচামালের অভাবে বিদ্যুৎ চাহিদামতো উৎপাদন করতে পারছি না’’

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসেবে মঙ্গলবার সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৩ হাজার ৮৫০ মেগাওয়াট৷ কিন্তু সম্ভাব্য উৎপাদন হচ্ছে এগারো হাজার ৮১০ মেগাওয়াট৷ ঘাটতি আছে দুই হাজার ৪০ মেগায়াটের৷ বিদ্যুৎ রেশনিংয়ের শুরুতে বলা হয়েছিল প্রতিদিন ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদুৎ পাওয়া যাবে৷ তিনি এখন তার চেয়েও আরো এক হাজার ১৯০ মেগাওয়াট কম পাওয়া যাচ্ছে৷ বোর্ডের পরিচালক শামিম হাসান জানান, ‘‘আমরা কাঁচামালের অভাবে বিদ্যুৎ চাহিদামতো উৎপাদন করতে পারছি না, যা পারছি সেভাবে লোডশেডিং করে বিতরণ করছি৷''

তার কথায়, ‘‘উৎপাদন আর কমার সম্ভাবনা কম৷ বাড়তে পারে৷ আমরা আগামীকাল (বুধবার) পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো৷
দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের প্রশ্নে তিনি বলেন, পুরো ২৪ ঘণ্টায় এক ঘণ্টা নয়, কোনো এলাকায় যখন লোডশেডিং করা হবে, তখন একঘণ্টা করা হয়৷ তাই কোনো এলাকায় টানা নয়, পর্যায়ক্রমে দুই-তিন ঘণ্টা লোডশেডিংও হতে পারে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য