যাদবপুরে তিন নতুন প্রার্থী সায়নী, সৃজন, অনির্বাণের লড়াই
অতীতে যাদবপুর কেন্দ্র অনেক অঘটনের সাক্ষী থেকেছে। এখানে সোমনাথ হেরেছেন, এখান থেকেই ভোটে জিতে যাত্রা শুরু করেছেন মমতা।
তৃণমূলের প্রার্থী সায়নী
গতবার যাদবপুর থেকে জিতেছিলেন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী। কিন্তু তিনি এবার ভোটে দাঁড়াননি। তার জায়গায় তৃণমূল প্রার্থী করেছে আরেক তারকা সায়নী ঘোষকে। সায়নী অবশ্য কিছুদিন হলো রাজনীতির জগতে আছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে আসানসোল দক্ষিণ থেকে লড়েছিলেন। কিন্তু বিজেপি-র অগ্নিমিত্রা পালের কাছে হেরে যান।
কখনো গাড়িতে
যাদবপুরে প্রতিদিন সায়নীর প্রচার চলছে। কখনো তিনি গাড়িতে দাঁড়িয়ে। সেখান থেকেই হাত মেলাচ্ছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে।
কখনো হেঁটে
কখনো হেঁটে প্রচার করছেন তিনি। সোজা চলে যাচ্ছেন মানুষের মধ্যে। তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তৃণমূলকে ও তাকে ভোট দেয়ার আবেদন জানাচ্ছেন।
পাশের বাড়ির মেয়ে
সায়নীর মধ্যে চিত্রতারকাসুলভ ভাবভঙ্গি নেই। বরং তিনি পাশের বাড়ির মেয়ের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে চাইছেন। সহজে তিনি মিশে যেতে পারেন মানুষের সঙ্গে। কখনো তার কোলে উঠে আসছে শিশু। কখনো তিনি গান গেয়েও শুনিয়ে দিচ্ছেন।
কী বলছেন সায়নী?
সায়নী লড়াই করতে ভালোবাসেন। এর আগে ভোটের লড়াইয়ে হেরে গিয়েও তিনি দলের যুব নেত্রী হিসাবে লড়াই করে গেছেন। সায়নী বলছেন, জিততে পারলে তিনি যাদবপুরকে মডেল কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে চান। আর জয় নিয়ে তার সংশয় নেই। তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূলের নেতা ও কর্মীরা দিনরাত খাটছেন। তিনি নিজেও গরম উপেক্ষা করে সমানে ঘুরছেন।
বামের যুব প্রার্থী
এবার একাধিক যুব নেতাকে প্রার্থী করেছে সিপিএম। যার মধ্যে অন্যতম সৃজন ভট্টাচার্য। তার বয়স ৩১ বছর। তিনি সিপিএমের ছাত্র শাখা এসএফআইয়ের পশ্চিমবঙ্গের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য। সৃজনের পরিবার হলো বামপন্থি পরিবার। যাদবপুর থেকে স্নাতকোত্তর সৃজন কবিতা লেখেন। কবিতার বইও আছে। এহেন যুব নেতাকে এবার ভোটের লড়াইয়ের ময়দানে পাঠিয়েছে সিপিএম।
যাদবপুরে বামেরা
এই কেন্দ্র থেকে জিতেছেন ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত। তখন অবশ্য কেন্দ্রের নাম আলাদা ছিল। জিতেছেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। আবার ১৯৮৪ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তিনি হেরেও গেছিলেন। পরে মালিনী ভট্টাচার্য জিতেছেন। ২০০৪ সালে জিতেছেন সুজন চক্রবর্তী। তারপর আর কোনো বাম প্রার্থী এখানে জিততে পারেননি। সৃজন কি পারবেন?
প্রচারে খামতি নেই
সকাল থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে সৃজনের প্রচার। কখনো গাড়িতে, কখনো হেঁটে। যাদবপুরে এই নতুন প্রজন্মের বাম নেতাকে নিয়ে উৎসাহ আছে। তার সঙ্গে সেলফি তোলার একটা হিডি়কও দেখা যাচ্ছে। তবে এখন প্রত্যেক প্রার্থীকেই প্রচারে মানুষের সঙ্গে সেলফি ও ছবি তোলার জন্য অনেকটা সময় রাখতে হয়।
টি শার্টে সৃজনের ছবি নিয়ে
বামেদের প্রচারেও দেখা যাচ্ছে সৃজনের ছবি-সহ টি শার্ট পরে সিপিএমের কর্মীরা লাল পতাকা হাতে চলেছেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই বাম দলের প্রচারের কায়দাও বদলেছে।
প্রশ্নের মুখেও শান্ত
সৃজন এর মধ্যে ভাঙড়ে প্রচার করতে গেছিলেন। গত বিধানসভায় এখান থেকে জিতেছিলেন নওসাদ সিদ্দিকি। তখন বামেদের সঙ্গে তার জোট ছিল। লোকসভায় বাম-কংগ্রেস জোট হয়েছে। তাই নিয়ে ভাঙড়ে আইএসএফ কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন সৃজন। মানুষ বলেন, তারা ভাইজানকে ভোট দেবেন। সৃজন শান্তভাবে বলেন, সেটা আপনাদের ব্যাপার। তবে তার আগে ভাববেন, কাকে দেয়া উচিত।
বিজেপি-রও নতুন প্রার্থী
বিজেপি যাদবপুর থেকে প্রার্থী করেছে অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে। তিনি গত বিধানসভা নির্বাচনে বোলপুরে বিজেপি প্রার্থী ছিলেন। জিততে পারেননি। তাকেই এবার যাদবপুরে প্রার্থী করেছে বিজেপি। কঠিন লড়াই এবং শক্তশালী বিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন অনির্বাণ।
মানুষের মাঝে চিকিৎসক অনির্বাণ
অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় পেশায় চিকিৎসক। তিনি যাদবপুর কেন্দ্র চষে ফেলছেন। সোজা চলে যাচ্ছেন মানুষের কাছে। বলছেন, জিতলে তিনি নারী সুরক্ষা ও দুর্নীতিমুক্ত রাজ্যের লক্ষ্যে কাজ করবেন।
কঠিন কাজ
গত লোকসভা নির্বাচনে মিমি যাদপবপুর থেকে প্রায় তিন লাখ ভোটের ব্যাবধানে জিতেছিলেন। ফলে নতুন জায়গায় প্রার্থী হয়ে অনির্বাণকে লড়তে হচ্ছে। কাজটা কঠিন। তবে তিনি বলছেন, যাদবপুর কেন্দ্রের সব জায়গায় ঘুরে তার মনে হয়েছে, আগের সাংসদ কোনো কাজই করেননি, মানুষের পাশে দাঁডা়ননি, মানুষ তাকে দেখেননি। মানুষের মনে এই নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বলে তার দাবি।
তিনজনই যাদবপুরে নতুন
যাদবপুরের তিনজন প্রধান প্রার্থীই এই কেন্দ্রে নতুন। তারা কেউই আগে এখান থেকে লড়েননি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে নতুনদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে। অনির্বাণও মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। বিজেপি-কে ভোট দেয়ার আবেদন জানাচ্ছেন।
কী হবে যাদবপুরে?
যাদবপুর লোকসভা ও বিধানসভা কেন্দ্রে অতীতে অনেক চমক দেখা গেছে। ১৯৮৪ সালে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে মমতার হারিয়ে দেয়া অন্যতম বড় চমক। আবার বিধানসভার ভোটে যাদবপুর থেকে হারতে হয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। সেই যাদবপুরে এবার সেই অর্থে কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী নেই। সায়নী, সৃজন দুজনেই যুব প্রার্থী। সেখানে পদ্ম ফোটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন অনির্বাণ। পারবেন কিনা, কে জিতবেন, সেটা জানা যাবে ৪ জুন, ফলপ্রকাশের দিন।