1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নতুন বছরেও অস্তিত্বের লড়াইয়ে ইউক্রেন

৩০ ডিসেম্বর ২০২২

২০২২ সালে বিশ্বের অন্য কোনো রাষ্ট্রকে অস্তিত্বের লড়াই করতে হয় নি, যেমনটা ইউক্রেন গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চালিয়ে আসছে৷ রুশ হানাদার বাহিনীর ধ্বংসলীলা সত্ত্বেও হাল ছাড়ছে না সে দেশ৷

https://p.dw.com/p/4LZ3G
দনেৎস্কে পতাকা লাগাচ্ছেন ইউক্রেনের সেনারা
ইউক্রেনের প্রতি যাবতীয় সংহতি সত্ত্বেও পশ্চিমা বিশ্ব সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সংঘাত এড়িয়ে যাবার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে৷ ছবি: Anatolii Stepanov/AFP/Getty Images

সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র হিসেবে ইউক্রেন স্বাধীনতার শুরুতেই নিজস্ব ভূখণ্ডে পরমাণু অস্ত্র মস্কোর হাতে তুলে দিয়েছিল৷ রাশিয়াও সে দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতা মেনে নিয়েছিল৷ রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত এড়াতে সামরিক জোট ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্য করতে চায় নি৷ অথচ বিনা প্ররোচনায় ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখল করে এবং পূবের ডনবাস অঞ্চলের বড় অংশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে আনতে সাহায্য করে৷ তারপর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে গোটা ইউক্রেনের উপর হামলা চালিয়ে আসছে সে দেশ৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন অতীতের স্বীকৃতি অস্বীকার করে এখন আর ইউক্রেনের অস্তিত্বই মানতে রাজি নন৷

২০১৪ সালের মতো এবার আর ইউক্রেনের উপর হামলা মেনে নিতে প্রস্তুত নয় পশ্চিমা বিশ্ব৷ সে যাত্রায় রাশিয়ার উপর সামান্য কিছু নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা ও পুটিনকে এড়িয়ে চলার মতো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন পশ্চিমা নেতারা৷ কিন্তু এবারের হামলা ইউরোপ ও অ্যামেরিকার জন্য অশনি সংকেত হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে৷ কারণ সোভিয়েত আমলের ‘গৌরব' ফিরিয়ে আনতে পুটিন শুধু ইউক্রেন নয়, বাল্টিক ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির উপরেও নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ চাপানোর চেষ্টা করতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে৷ তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে ইউরোপের কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব কেড়ে নেবার এমন প্রচেষ্টা কোনোমতেই সফল হতে দেওয়া যায় না – সে বিষয়ে জোরালো ঐকমত্য দেখা যাচ্ছে৷

ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার এই বছরে পশ্চিমা বিশ্ব অভূতপূর্ব ঐক্য দেখিয়ে এসেছে৷ অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের পাশাপাশি আর্থিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তার ঢল নেমেছে ইউক্রেনে৷ ইউক্রেনের সরকার, সেনাবাহিনী ও জনগণ সেই সহায়তা কাজে লাগিয়ে মস্কোর সামনে নতি স্বীকার করে নি৷ বরং চমকপ্রদ সাফল্য দেখিয়ে রুশ হানাদার বাহিনীর হাত থেকে দেশের অনেক অংশ পুনরুদ্ধার করেছে৷ লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় জ্বালানি ও নাগরিক পরিষেবা কাঠামো বিধ্বস্ত হওয়া সত্ত্বেও মানুষের মনোবল অটুট রয়েছে৷

ইউক্রেনের প্রতি যাবতীয় সংহতি সত্ত্বেও পশ্চিমা বিশ্ব সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সংঘাত এড়িয়ে যাবার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে৷ ইউক্রেনের অনুরোধ সত্ত্বেও সে দেশকে এমন অনেক অস্ত্র সরবরাহ করা হয় নি, যেগুলি রাশিয়ার উপর পালটা হামলা চালানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে৷ রক্ষণাত্মক ও আক্রমণাত্মক অস্ত্রের সেই সীমারেখা অস্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে নি৷

অভূতপূর্ব পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও একের পর এক সামরিক ব্যর্থতা সত্ত্বেও রাশিয়া এখনো পর্যন্ত ইউক্রেনের উপর হামলা চালিয়ে আসছে৷ তেল, গ্যাস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ রপ্তানি বাবদ আয় কাজে লাগিয়ে মস্কো তার সামরিক যন্ত্র চালু রাখতে সক্ষম হয়েছে৷ রণক্ষেত্রে যাবার চাপ এড়াতে অসংখ্য তরুণ রাশিয়া ছেড়ে পালিয়েছেন৷ নতুন বছরেও রাশিয়া সেই চাপ সামলে আগ্রাসন চালিয়ে যেতে পারবে কিনা, সে দিকেই সবার নজর থাকবে৷ ধারাবাহিক হামলার মুখে ইউক্রেনের ক্ষমতা ও মনোবলও আরও কতদিন অটুট থাকবে, সেই প্রশ্নও উঠে আসছে৷ ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় গোটা বিশ্বের অর্থনীতি আরও বিপর্যস্ত হবার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷

এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)