গরিবের ঘরে শিক্ষার আলো জ্বালে আবর্জনা
তিন বছর আগেও ফাওয়াসকে ক্লাস থেকে বের করে দেয়া হতো, মা সামান্য কিছু টাকা দিতে পারেন না বলে সইতে হতো অপমান৷ স্কুল থেকে আর মাথা নীচু করে ফিরতে হয় না ফাওয়াসকে৷ আবর্জনার বিনিময়ে পড়ার সুযোগ পায় সে৷ দেখুন ছবিঘরে...
যে দিনের স্মৃতি আজো কষ্ট দেয়
ফাওয়াস আদেওসুন তখন সবে স্কুলে যেতে শুরু করেছে৷ নাইজেরিয়ার লাগোস শহরে তার স্কুলজীবন শুরু হতে-না-হতেই শেষ হতে বসেছিল দারিদ্র্যের কারণে৷ মা স্কুলের বেতন দিতে পারেন না৷ তাই প্রায়ই ক্লাস থেকে বের করে দেয়া হতো ফাওয়াস আদেওসুনকে৷
গরিবের সহায় মাই ড্রিম স্টিড স্কুল
ফাওয়াস আদেওসুনের মা ফাতিমোহ তখন একটা সেলুন চালাতেন ৷ ছোট্ট সেই সেলুন চালিয়ে সামান্য যা আয় করতেন তা দিয়ে ছয় সন্তানের ন্যূনতম খরচ জোগানোাই সম্ভব হচ্ছিল না৷ টেনেটুনে যা-ও সংসারটা একটু চালাচ্ছিলেন, ২০১৮ সালে বকেয়া ভাড়া দিতে না পারায় সেই সেলুনও ছেড়ে দিতে হলো৷ ফাতিমোহ পড়লেন মহাবিপদে৷ ঠিক সেই সময়েই খোঁজ পেলেন মাই ড্রিম স্টিড নামের এমন এক স্কুলের, যেখানে সন্তানদের পড়াতে কোনো নগদ টাকা লাগে না৷
আবর্জনাই বেতন
মাই ড্রিম স্টিড স্কুলে শিক্ষার্থীদের বেতন নগদ টাকায় পরিশোধ না করলেও চলে৷ টাকার বদলে আবর্জনা এনে দিলে সেই আবর্জনার বাজারমূল্য অনুযায়ী নিজেদের পাওনা বুঝে নেয় স্কুল৷ নাইজেরিয়ায় এমন স্কুল আছে ৪০টি৷ সবগুলোতেই শিক্ষার্থীদের মা-বাবারা প্রতিদিন বস্তা ভরে আবর্জনা নিয়ে আসেন৷ কুড়িয়ে আনা সেই আবর্জনা ওজন করে নির্ধারণ করা হয় মোট দাম৷ সেই দাম থেকেই কেটে নেয়া হয় স্কুলের বেতন৷
মা-ছেলের আনন্দ
ফাওয়াস আদেওসুনকে এখন আর স্কুলের বেতন নিয়ে ভাবতে হয় না৷ অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রতিদিন হাসিমুখে স্কুলে যায় সে৷ ফাতিমোহ জানালেন এখন ফাওয়াসের শখ-আহ্লাদও পূরণ করে দেয় আবর্জনা, ‘‘ও যদি কখনো খেলাধুলার পোশাক কিনতে চায়, স্কুল আমাকে শুধু বলে দেয় কতটুকু (আবর্জনা) নিয়ে যেতে হবে...৷’’ তারপর ফাতিমোহ সেই পরিমান আবর্জনা নিয়ে যান আর তার বিনিময়েই ফাওয়াসের খেলার পোশাক কেনার টাকা দিয়ে দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ৷
৭ থেকে ১২০
লাগোসের আজেগুনলে এলাকায় স্কুলটির যাত্রা শুরু ২০১৯ সালে৷ পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা মাই ড্রিম স্টিড-এর প্রতিষ্ঠাতা আলেক্সান্ডার আখিগবে তখন স্কুলটি খুলেছিলেন মাত্র সাতজন শিক্ষার্থী নিয়ে৷ আবর্জনার বিনিময়ে বেতন পরিশোধের সুযোগ দেয়ায় সেই স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যা এখন ১২০৷