1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কিশোর অপরাধ ঠেকাতে বয়স কমানোর উল্টো পথে হাঁটা

সমীর কুমার দে ঢাকা
৪ জুলাই ২০২২

"মাথা ব্যাথা হলে কি আমরা মাথা কেটে ফেলি? তাহলে শিশু অপরাধ ঠেকাতে শিশুদের বয়স কেন কমাতে হবে? নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তের পরই তো সারা বিশ্বে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু নির্ধারণ করা হয়েছে।

https://p.dw.com/p/4DdY3
Symbolbild Messerkriminalität
প্রতীকী ছবিছবি: imagrbroker/imago

বিশ্বে এখন এটি নিয়ে কোন আলোচনায় সৃষ্টি হয়নি। শুধু কিশোর অপরাধের কথা বলে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সেটা উল্টো পথে হাঁটার সামিল হবে। সরকার খুবই যৌক্তিকভাবে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষর করেছে। এখন নতুন এই সিদ্ধান্ত বিশ্বে কি বার্তা দেবে?”

শিশুরা গুরুতর অপরাধ করলে যেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়, এ জন্য শিশুদের বয়স ১৮ বছর থেকে কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলের কাছে এমন মন্তব্য করেছেন।

আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির রোববারের বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, "বর্তমানে আমরা কিশোর গ্যাং লক্ষ্য করছি। এজন্য দেশের প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি আইনের কিছু সংশোধন হওয়া উচিত। ইন্টারন্যাশনাল ল' অনুযায়ী ১৮ বছর পর্যন্ত শিশু। আইনে আছে শিশুদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। দেশের প্রেক্ষাপট ইন্টারন্যাশনাল প্রেক্ষাপপের সঙ্গে মেলে না। গত কয়েক দিনে আপনারা লক্ষ্য করেছেন, ১৪ বছরের দশম শ্রেণির ছাত্র এক শিক্ষককে মেরে ফেলেছে। এখন তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়া যাচ্ছে না। কারণ আন্তর্জাতিক আইনে, দেশের প্রচলিত আইনে সে শিশু। শিশুর বিরুদ্ধে তো অ্যাকশন হয় না। সে কারণে বাস্তবতার নিরিখে আমরা মনে করছি, আইনের পরিবর্তন হওয়া দরকার। সে আলোকে আমাদের আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি এবং ওনার মাধ্যমে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আইনমন্ত্রী বিষয়টি পর্যালোচনা করবেন।”

নাসিমা আক্তার জলি

মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, "দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যে আইন করেছিলেন, তখন শিশু আইন ছিল ১৪ বছর। এখন আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ১৮ বছর করা হয়েছে। সে বিষয় বিবেচনা করে নতুন আইন কীভাবে তৈরি করা যায়, আইনমন্ত্রীর কাছে আমরা সেই পরামর্শ কামনা করেছি। কিশোর গ্যাং এখন যে হারে বিস্তৃতি লাভ করছে এবং একই সঙ্গে মাদকদ্রব্য। ইদানিং তরুণেরা বেশি মাদকসেবী বলে আমাদের কাছে রিপোর্ট রয়েছে। বয়স্করা তুলনামূলক কম। বয়সের কারণে আইন প্রয়োগ শিথিল হয়ে যায়। ফলে বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি শিশু আইন সংশোধন করার। আমার ব্যক্তিগত অভিমত শিশুদের বয়স ১৪ বছর পর্যন্ত করা হোক। তবে বৈঠকে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধু সিদ্ধান্ত হয়েছে ১৮ বছর থেকে কমানোর। সেটা কত হবে, তা এখন আমরা নির্ধারণ করিনি।”

আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশে কাজ করা একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা পরিচয় প্রকাশ না করা শর্তে ডয়চে ভেলেকে বলেন, "যে যুক্তি দেখিয়ে মন্ত্রীরা এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন তা সঠিক নয়। বঙ্গবন্ধুর সময় যে আইন করেছিলেন, তখন শিশু আইন ছিল ১৪ না ১৬ বছর। আর শিশুদের যে আইনের আওতায় না যাচ্ছে না, একথাও সঠিক না। শিশু সংশোধনাগার কেন্দ্রে আমাদের সারাদেশে ধারণ ক্ষমতা ৭৫০ জনের। অথচ প্রতি মাসে আসছে আসছে দেড় হাজারেরও বেশি শিশু। ২০১৩ সালে শিশু আইনটি করার পর আমরা এখনও এটার বাস্তবায়নই করতে পারিনি। আইনে বলা আছে প্রতি উপজেলায় একজন করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসার থাকবেন। কিন্তু একটি উপজেলায়ও একজনকে তারা নিয়োগ দিতে পারেনি। প্রতিটি থানায় একজন শিশুবান্ধব কর্মকর্তা থাকবেন। থানাগুলোতেও এটা দেওয়া হয়েছে একজনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। একটি আদালতও আমরা শিশু বান্ধব করতে পারিনি। ফলে আইনের বাস্তবায়ন না করেই নতুন করে সংশোধনের দিকে গেলে উল্টো ফল হতে হবে। ফলে তারা নিজেদের দায়িত্ব পালন না করে আইনের মাধ্যমে শিশুদের নিয়ন্ত্রণ করতে চান সেটা ঠিক না। এমনকি এই আইন বাস্তবায়নে কোন বাজেটও দেওয়া হয়নি।”

শিশু আইন বাস্তবায়নে উপজেলায় একজন করে প্রবেশন অফিসার দেওয়ার কথা থাকলেও কেন দেওয়া হয়নি জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রফিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) কাছে বারবার লোক চেয়ে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু পিএসসি লোক দিতে না পারলে আমরা লোক দেবো কিভাবে? তারপর উপজেলায় যারা সমাজসেবা অফিসার আছেন তাদের আমরা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রবেশন অফিসারের কাজ করতে বলেছি। সেটা তারা করছেন। আর আমরা কিন্তু শিশু আইন পরিবর্তনের কোন সুপারিশ করিনি।” 

কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাসিমা আক্তার জলি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এটা অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত হচ্ছে। আগে আমাদের কোথাও ১৮, ১৬, ১৪ এমন ছিল। আন্তর্জাতিক আইন সমন্বয় করে অনেক আন্দোলনের পর সেটা ১৮ বছর হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কিশোর অপরাধ কমাতে পারছে না শুধু এই কারণে আইন সংশোধন করে বসয় কমানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে সেট নির্বুদ্ধিতার পরিচয় হবে। কিশোর অপরাধ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। সেখানে আমরা কি পদক্ষেপ নিয়েছি? এটার ইমপ্যাক্ট কিন্তু বহু জায়গায় পড়বে। বাল্য বিবাহ বেড়ে যাবে, শিশু শ্রমসহ অনেক জায়গায় এর প্রভাব পড়বে। এটা হবু চন্দ্র রাজার গবু চন্দ্র মন্ত্রীর মতো অবস্থা। সবখানেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আব্দুস শহীদ মাহমুদও ডয়চে ভেলের কাছে একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, "কিশোর অপরাধ যেভাবে বাড়ছে সেখানে কিছু বিষয় সংশোধনের সুযোগ আছে। যেমন কোন কিশোর যদি অপরাধ করে ফেলে তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।” তাহলে এটা কি শিশু আইনের বিরুদ্ধে গেল না? জবাবে তিনি বলেন, "শুধু গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে এটা করা যেতে পারে। অন্যান্য অপরাধের বিচার আগেই মতো শিশু আইনে হবে। অবশ্য এটা আমার ব্যক্তিগত মত, এটা প্রতিষ্ঠানের কোন সিদ্ধান্ত না।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য