1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কানে ‘নাক কাটা' গেল বাংলাদেশের!

পার্থ সঞ্জয় ফ্রান্স
২৯ মে ২০২৩

তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাইফুল ইসলাম জানান, তাদের কাছে দীর্ঘ সেই তালিকা অস্বাভাবিক মনে হয়েছিল। তালিকার অনেকেই কান থেকে দেশে ফিরবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ ছিল।

https://p.dw.com/p/4Rvft
কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের স্টল৷ ছবিতে দু’টো চেয়ার ও একটি টিভি দেখা যাচ্ছে৷ পাশে ভারতের স্টল৷ছবি: Partho Sanjay

সেই কবে ২০০২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্যারালাল সেকশন 'ডিরেক্টরর্স ফোর্টনাইটে' অংশ নিয়ে 'ফিপ্রেসি' সম্মান জিতেছিল তারেক মাসুদের ছবি মাটির ময়না। এর প্রায় দুই দশক পর করোনাকালে কানের ৭৪তম আসরে ২০২১ সালে বাংলাদেশ তার চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অসামান্য অর্জন লেখে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের 'রেহানা মরিয়ম নূর' সিনেমা দিয়ে। উৎসবের দ্বিতীয় সেরা 'আ সার্তে রিগা' বিভাগে প্রতিযোগিতা করে আজমেরী হক বাঁধন অভিনীত ছবিটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশের চলচ্চিত্রের এই যাত্রা  জাগিয়েছিল স্বপ্ন আর সম্ভাবনা।  

পরের বছর উৎসবের ৭৫-তম আসরে ভারতীয় প্যাভিলিয়নে শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত 'মুজিব: দ্য মেকিং অফ আ নেশন'- এর ট্রেলার প্রকাশে যোগ দিয়ে দেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, ‘‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে আাগমী বছর উৎসবের ছবির বাজারে স্টল নেবে বাংলাদেশ।''

গেল কয়েক বছর ধরে কান উৎসবে যোগ দেয়া বাংলাদেশের নির্মাতা, প্রযোজক কিংবা হল মালিক সবাই গণমাধ্যমে সরকারের কাছে যে আর্জি জানিয়েছিল, যেন তারই অনুবাদ ছিল তথ্যমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতি।

সেভাবেই এ বছর প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ। উৎসবের ৭৬-তম আসরে ছবির বাজারে স্টল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (বিএফডিসি)।

৩০ এপ্রিল গণমাধ্যমে এবারের উৎসবে ছবির বাজারে অংশ নেবার কথাও জানান তথ্যমন্ত্রী।

ঐ দিনেই মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায় কান উৎসবে যোগদানের জন্য বিএফডিসি কর্তৃক চূড়ান্ত বিশ জনের তালিকা। মূলত সেই তালিকা ঘিরেই তৈরি হয় গড়িমসি।

বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (বিএফডিসি)-র তালিকায় ঠাঁই পাওয়া প্রতিষ্ঠানের সাত কর্মকর্তা, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক, অভিনতো জায়েদ খান ও একজন পরিচালক বাদে বাকিদের চলচ্চিত্রের সঙ্গে কতটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, কান উৎসবে কেন তাদের পাঠাতে হবে- তা-ই বুঝে উঠতে পারছিল না তথ্য মন্ত্রণালয়। তাই বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও তালিকা চূড়ান্ত করতে পারছিল না মন্ত্রণালয়।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাইফুল ইসলাম জানান, তাদের কাছে দীর্ঘ সেই তালিকা অস্বাভাবিক মনে হয়েছিল। তালিকার অনেকেই কান থেকে দেশে ফিরবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ ছিল।

এই তালিকা প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য বিএফডিসি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিনের বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এফডিসির এক পরিচালক বলেন, ‘‘উৎসবে যোগ দেয়ার পর্যাপ্ত অর্থের জোগান দিতেই এই লম্বা তালিকা।'' অর্থাৎ বিএফডিসি'র কর্মকর্তাদের 'স্পন্সর' হিসেবে বাকি অনেকের তালিকাভুক্তি।

সংকট নিরসনে মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বিএফডিসি'র তিন কর্মকর্তা, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক, অভিনেতা জায়েদ খান ও পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজারসহ ছয়জনের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয় উৎসবের আগের দিন, অর্থাৎ ১৫ মে।

১৬ মে পর্দা ওঠে কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৬ তম আসরের। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসাহজাগানিয়া উদ্যোগ নিয়ে উৎসবে যোগ দেয়া গণমাধ্যম কর্মী, ফিল্ম প্রফেশনালসের ছিল দারুণ আগ্রহ।

Bangladesch auf dem Filmfestival Cannes 2023
স্টলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের সাইনবোর্ডছবি: Partho Sanjay

উৎসবের প্রথম দিন থেকে 'মার্শে দ্যু ফিল্মে' ভারতীয় আর থাইল্যান্ডের 'বুথে'র পাশে বাংলাদেশের বুথটি থাকলো নিরাভরণ হয়ে। একটি টেবিল, দুইটি চেয়ার, একটি সোফা নিয়ে সজ্জিত বুথের একটি কোণায় নেমপ্লেটে 'বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনে'র নাম।

একেকটি দিন গিয়েছে আর অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হয়েছে। এই বুঝি এলো, বাংলাদেশ দল!

অপেক্ষা ভিনদেশি সাংবাদিকেরও।

ভারতীয় সাংবাদিকরা তো বেশ আগ্রহ নিয়েই অপেক্ষায় ছিলেন, বারবার খোঁজ নিচ্ছিলেন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে। অনেকে আগে বাড়িয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন।

সেইসব অসন্তোষ আর প্রশ্নের উত্তরে হয়েছে আমাদের রক্তক্ষরণ।

সেই ৭০-তম আসর থেকে (কোভিডের জন্য ২০২০ বাদে) হা পিত্যেশ করেই সংবাদ পরিবেশন করতে হয়েছে। কবে অন্য সব দেশের মতো ছবির বাজারে বাংলাদেশ থাকবে? লাল সবুজ থাকবে? আমাদের চলচ্চিত্র থাকবে?

উৎসবের ষষ্ঠ দিন ২১ মে জানা গেল, আগের চূড়ান্ত তালিকা ফিরে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে। নতুন করে আগের ছয় জনের তালিকা তথ্য মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আবারো পাঠানো হয়। তারপর অবশেষে অনুমোদন মেলে। সে অনুমোদনের প্রেক্ষিতে ভিসার জন্য আবেদন করা হয় ফ্রান্স দূতাবাসে। সবই রকেট গতিতে। ভিসা পাবার আগে কনফার্ম করা হয় বিমানের টিকেট। তবে এবার ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন চারজন। শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিপুন আখতার ও পরিচালক গুলজার আবেদন করেননি।

উৎসবের নবম দিন (২৪ মে) পর্যন্ত মেয়াদ থাকা ছবির বাজারে অষ্টম দিন ফ্রান্স সময় দুপুর ১২ টায় জানা গেল, ভিসা হয়নি বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের।

কারণ হিসেবে দূতাবাস জানিয়েছে, 'সময় স্বল্পতা'।

প্রতিনিধি শূন্য বুথে এক টুকরো বাংলাদেশ

'মার্শে দ্যু ফিল্মে' এ বছর বাংলাদেশের একমাত্র ছবি ছিল অরণ্য আনোয়ার পরিচালিত ও পরি মনি অভিনীত 'মা'। ২০ মে ছবির প্রর্দশনী ঘিরে সিনেমার পরিচালক অরণ্য ও অন্যতম প্রযোজক পুলক কান্তি বড়ুয়া উৎসব ভেন্যুতে আসেন শুরুর দিন ১৬ মে। তাদের দাবি, এই বুথের অন্যতম স্পন্সর তারা। শূন্য বুথে দ্বিতীয় দিনেই মা ছবির ব্যানার, পোস্টারে তারা ভরিয়ে তোলেন বুথটিকে।

মূলত কানে তাদের ছবি প্রচারণার কেন্দ্র হয়ে ওঠে বুথটি। দেশ থেকে আসা সংবাদকর্মী, পরিচালকদের 'মিটিং পয়েন্ট'ও হয়ে ওঠে বুথটি।

যদিও একটি ছবিকে ঘিরে কেন বাংলাদেশের বুথ- ভিনদেশিদের এমন প্রশ্নের মুখোমুখিতে কারোই মুখ উজ্জ্বল হয়নি।

উৎসবের পঞ্চম দিন ফেস্টিভ্যাল ভবনের 'মিনি থিয়েটার' 'পালে ই' তে দেখানো হয় মা ছবিটি।

ষষ্ঠ দিনে মা ছবির সংশ্লিষ্টরা সরিয়ে নেন ছবির প্রচারণা সরঞ্জাম।

২১ মে থেকে আবারো শূন্য হয়ে পরে স্টল। শেষ হয় শূন্যতাতেই। সাথে যোগ হয় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে একটা বড় শূন্য।

প্রথমবারই সম্ভাবনা নষ্ট করা হলো

'স্টল নিয়ে এই অব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশকে ছোট করেছে। এটা হতে পারেনি অব্যবস্থাপনা ও পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে', বলছিলেন আমেরিকা থেকে কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেয়া প্রবাসী বাংলাদেশী ও চলচ্চিত্র একটিভিস্ট ইসমাইল হোসেন।

ঢাকা থেকে আসা ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল জানান, ‘‘এবারই প্রথম বাংলাদেশের বুথ নেয়া হলো। এটি যথাযথ করা গেলে খুবই ভালো হতো। দুঃখজনক, হয়নি। ভুল শুধরে আগামী বার অংশ নিক বাংলাদেশ০ এটাই চাওয়া।‘‘

তিনি আরো যোগ করেন, ‘‘কানে এরকম হয়ে থাকে। এটি বড় কিছু নয়। এই ত্রুটি কাটানো সম্ভব।''